পাঁচ ব্যাংক একীভূত: আস্থার সংকট কাটিয়ে নতুন যাত্রা
খেলাপি ঋণ থেকে কর্পোরেট গভর্ন্যান্স: চ্যালেঞ্জ উত্তরণের ১০ পথ
আস্থার সংকট, চ্যালেঞ্জ উত্তরণ ও নতুন যাত্রা
সংবাদ সারমর্ম
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ চূড়ান্ত করেছে যে পাঁচটি শরিয়াভিত্তিক বেসরকারি ব্যাংক একীভূত হবে এবং একটি নতুন রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংক গঠন করা হবে।
ব্যাংকগুলোর নাম: ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক
নতুন ব্যাংকের সম্ভাব্য নাম দেওয়া হয়েছে ‘ইউনাইটেড ইসলামী ব্যাংক’।
কি হবে এবং কি প্রভাব পড়তে পারে
প্রতিটি ব্যাংকে একজন প্রশাসক (বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা) নিয়োগ দেওয়া হবে, এবং প্রশাসককে সহায়তা করার জন্য আরও চারজন কর্মী থাকবে।
ঐ ব্যাংকগুলোর বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ (বোর্ড) ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (MD) এর পদগুলি এক ধাপে শূন্য ঘোষণা করা হবে। শেয়ারধারীদের শেয়ারও শূন্যে পরিণত হবে।
সব সম্পদ ও দায়ভার (liabilities) নতুন গঠিত “ইউনাইটেড ইসলামী ব্যাংক”-এ স্থানান্তর করা হবে।
টেকসইভাবে কাজ করতে সময় লাগবে, নথিভুক্ত সংবাদ অনুযায়ী প্রক্রিয়াটি শেষ হতে পারে প্রায় দু’ বছর।
একীভূত করার প্রক্রিয়ার জন্য প্রাথমিকভাবে প্রায় ৳ ৩৫,২০০ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে, যার মধ্যে সরকারের অংশ থাকবে প্রায় ৳ ২০,২০০ কোটি টাকা।
⚠️ উদ্বেগ ও চ্যালেঞ্জ
খেলাপি ঋণের পরিমাণ অনেক বেশি — কিছু ব্যাংকে ৪৮-৯৮% পর্যন্ত ঋণ বর্তমানে খেলাপিতে পরিণত।
শেয়ারধারীদের গুরুত্বপুর্ণ স্বার্থ রয়েছে; শেয়ারগুলোর ‘শূন্য’ ঘোষণা করা হলে তাদের জন্য কি বিকল্প থাকবে, সেটি গুরুত্বপূর্ণ হবে।
কর্মচারি ও আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষা করা হবে বলে বলা হচ্ছে, কিন্তু বাস্তবে প্রক্রিয়া কতটা মসৃণভাবে হবে তা সময় বলবে।
চ্যালেঞ্জ উত্তরণের সহজ ১০ উপায়
১। খেলাপি ঋণ কঠোরভাবে ব্যবস্থাপনা
খেলাপি ঋণকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত মামলা, পুনঃতফসিলের অপব্যবহার বন্ধ, এবং সঠিকভাবে ঋণ পুনরুদ্ধার।
২। প্রশাসক ও বোর্ডে পেশাদারিত্ব
রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত, দক্ষ ব্যাংকার ও আর্থিক বিশেষজ্ঞ দিয়ে পরিচালনা নিশ্চিত করা।
৩। শেয়ারহোল্ডারদের ন্যায্য সমাধান
শেয়ারের দাম শূন্য ঘোষণার পরিবর্তে একটি সুষ্ঠু পুনর্মূল্যায়ন বা ক্ষতিপূরণ ব্যবস্থা করা।
৪। আমানতকারীর আস্থা রক্ষা
আমানতের নিরাপত্তা ১০০% নিশ্চয়তা দিয়ে স্পষ্ট ঘোষণা ও নিয়মিত তথ্য হালনাগাদ করা।
৫। প্রযুক্তিনির্ভর একীভূতকরণ
একীভূত ব্যাংকের সফটওয়্যার, ডেটাবেইস ও সেবাগুলো দ্রুত সমন্বয় করা, যাতে গ্রাহক সেবায় বিঘ্ন না ঘটে।
৬। কর্মচারীদের দক্ষতা উন্নয়ন
কর্মী ছাঁটাই না করে তাদের প্রশিক্ষণ, পুনর্বিন্যাস এবং আধুনিক ব্যাংকিং জ্ঞান দেওয়া।
৭। কর্পোরেট গভর্ন্যান্স মজবুত করা
প্রতিটি সিদ্ধান্তে স্বচ্ছতা, নিরীক্ষা জোরদার, এবং নিয়মিত অডিট রিপোর্ট প্রকাশ।
৮। রাষ্ট্রীয় সহায়তা ও পুনঃমূলধন
সরকারের প্রদত্ত টাকাকে অপচয় না করে ঋণ পুনরুদ্ধার ও নতুন বিনিয়োগে ব্যবহার।
৯। নতুন পণ্য ও সেবা চালু
গ্রাহকের আস্থা ফেরাতে ডিজিটাল ব্যাংকিং, ইসলামিক ইনভেস্টমেন্ট সেবা, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ঋণ চালু করা।
১০। দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত পরিকল্পনা
শুধু টিকে থাকার জন্য নয়, বরং ৫–১০ বছরের মধ্যে একটি শক্তিশালী, প্রতিযোগিতামূলক ও লাভজনক ব্যাংক গড়ে তোলার রোডম্যাপ তৈরি।